Monday, 5 October 2020

ধর্ষনের এই দুর্বার গতি রুখবে কে জেগে উঠো বাংলাদেশ।।

 নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে অনৈতিক কাজের অপবাদ দিয়ে এক নারীকে (৩৬) বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে একদল যুবক। নির্যাতনকারীদের বারবার বাবা ডেকেও শেষ রক্ষা হয়নি ওই নারীর।



রোববার (০৪ অক্টোবর) দুপুর থেকে নির্যাতনের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হলে জেলায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপরই অভিযান নামে প্রশাসন। ঘটনায় জড়িত থাকা সন্দেহে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আব্দুর রহিম (২৪) নামে এক যুবককে আটক করেছে। আব্দুর রহিম জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে। তিনি স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারের সেকেন্ড ইন কমান্ড বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে নির্যাতনকারী সন্ত্রাসীদের ভয়ে তালা দিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে নির্যাতিতা ও তার পরিবারের লোকজন। তার স্বজনদের কাছ থেকেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, গত তিন বছর আগে ওই নারীর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে তার স্বামী আরো একটি বিয়ে করলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ওই নারীর আগের স্বামী তার সাথে দেখা করতে তার ঘরে ঢোকেন। বিষয়টি দেখে পেলে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার। রাত ১০টার দিকে দেলোয়ার তার লোকজন নিয়ে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে। পরে অনৈতিক কাজের অভিযোগ এনে ওই নারীকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিটিয়ে নারীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে তাকে মারধর করে অভিযুক্তরা। এসময় গৃহবধূ চিৎকার করলেও বন্ধ হয়নি নির্যাতন। ভিডিও চিত্র দেখা একাধিক ব্যক্তি বলেন, স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বাদল, কালাম, সাইফুদ্দিন, রহিম ও সুমন সহ ৬-৭ ওই নারীর ওপর এ নির্যাতন চালিয়েছে। নির্যাতনকারী দেলোয়ার ও তার বাহিনীর লোকজনের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও দেখে পুলিশ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে আব্দুর রহিম নামের নির্যাতনকারী দলের এক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবদুর রহিম ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে একজনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে। এ নেক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।


তাওহীদ ও শির্ক এর পার্থক্য নির্ণয়।

Monday, 28 September 2020

সংবাদ কি এবং কি ভাবে ।

                                                সংবাদ কি এবং কি ভাবে ।

++++++++++++++++++++

সংবাদ সাধারণত সেটি যা মানুষের শুনার জন্য আগ্রহ থাকে এবং কোন জ্ঞান পিপাসু কে কোন বিষয়ে তথ্য দিয়ে থাকে তাকে সাধারণত সংবাদ বলা হয়ে থাকে। সংবাদ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ নিউজ News চারটি অক্ষর নিয়ে গঠিত হয়। যার মানে হল N = North, E = East W= West, এবং S= South. উত্তর পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ চারিপাশের কখন কোথায় কী হচ্ছে তার সমন্বিত জ্ঞানের নামই হচ্ছে সংবাদ।
আবার অনেকেই বলতে চান যে প্রাত্যহিক যে ঘটনাগুলো ঘটে সেগুলো নিউজ নয় সে গুলো ঘটনা। কোন ঘটনা তখনই সংবাদ বা খবর হয় যখন তা সাধারণেে শুনার আগ্রহ তৈরী করে এবং সেটি নিউজ হয়ে থাকে। তাহলে মোটা কোথায় আমরা বলতে পারি আমাদের চারপাশে যা কিছু ঘটছে তা অন্যের নিকট জানার জানানোর উপযোগী করে পরিবেশনা টিকে সংবাদ বলে। আর যিনি সে কাজ টি করেন তাকে বলা হয় সাংবাদিক বা সংবাদকর্মী।
বর্তমান সময়ে প্রচারমাধ্যমের ভিন্নতার কারণে সংবাদকর্মীদের ব্যাপক ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, সেটি আমরা অন্য সময় আলোচনা করব। এখন আমরা সংবাদ বা নিউজ কত প্রকার সেটা জানার চেষ্টা করছি। সাধারণত সংবাদ চার প্রকার।
১/ চলমান সংবাদ বা Hard News.
২/ আবেদনময় সংবাদ বা Soft News.
৩/ অনুসন্ধানী সংবাদ বা Investigation News এবং
৪/ দুঃসংবাদ বা Bad / Sad News.
উপরের প্রদত্ত প্রকারভেদ গুলো যদি আমরা বিশ্লেষণ করি প্রত্যেকটি প্রকারের বিশ্লেষণ আমাদেরকে প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা সংবাদ সম্পর্কে ভিন্নতা তৈরি করার দেবে। তাই আসুন আমরা উপরে চার প্রকারের সংবাদ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।
১. চলমান সংবাদ বা Hard News. প্রতিদিন অনেক ঘটনা ঘটে এবং সংবাদ হয় কিন্তু চলমান সংবাদ বলতে আজকের ঘটনা বা সংবাদ আজকে এবং অতি দ্রুততার সাথে প্রকাশ করাকে বুঝায় । যেমন লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বাসচাপায় এক পথচারী বাস চাপায় নিহত। উক্ত ঘটনাটি সেদিনের জন্য একটি চলমান সংবাদ। This is called A Hard News.
২. আবেদনময় সংবাদ বা Soft News - আবেদনময় সংবাদ সাধারণত মানুষের আবেগ বা অনুভূতিকে নাড়া দিয়ে থাকে। গতবছর লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বাসচাপায় পড়ে যে যুবকটি মারা গিয়েছিল সেই যুবকটি একজন অন্ধ বাপের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। তাকে হারিয়ে পরিবার এখন নিঃস্ব, পরিবারের কাছে সরকারের সহযোগিতা পৌঁছানো একান্ত প্রয়োজন ।
৩. অনুসন্ধানী সংবাদ বা Investigation News - অনুসন্ধানী সংবাদ বলতে বোঝায় সাধারণত সংবাদের পেছনে যদি কোন সংবাদ থাকে তাহলে সেটিকে অনুসন্ধানী সংবাদ বলে। যেমন লক্ষ্মীপুর রায়পুরে যে যুবক বাস চাপায় নিহত হয়েছিল সেই যুবকটি মদপ বা নেশা গ্রস্ত ছিল কিনা। অথবা মামলাটি তদন্ত পুলিশের কোন দুর্বলতা আছে কিনা? অথবা মালিকদের সাথে পুলিশের যোগসাজশে মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা? ইত্যাদি।
৪. দুঃসংবাদ বা Bad / Sad News - দুঃসংবাদ বিষাদের সংবাদ প্রত্যহ আমাদের জীবনে ঘটে থাকে সেগুলো হয়তো কখনো গুরুত্ব পায় কখনো গুরুত্ব পায় না। তবে দুঃসংবাদ গুরুত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল বিষয় হচ্ছে সংবাদের শিরোনাম। সংবাদ শোনার জন্য মানুষের আগ্রহের বিষয় প্রতিদিনই মানুষ মারা যায় জন্ম নেয় পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়ম কিন্তু কোনো সেলিব্রেটি বা বিখ্যাত লোক যদি মারা যায় তাহলে সেটি সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে, তাই তখন সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হয়ে থাকে। যদিও সে ঘটনাটি একটি সংবাদ। দুঃসংবাদ এর ক্ষেত্রে সাধারণত আরেকটি বিষয় আমাদের সামনে ভেসে আসে সেটি একটি সমাজের অধঃপতনের দিক। বিশেষ করে কোন যুবসমাজ নেশায় আক্রান্ত হলে কোন যুব সমাজের মধ্যে চুরি, খুন, ধর্ষণ বেড়ে গেলে এগুলো দুঃসংবাদ হিসেবেই আমাদের কাছে আসে।
কিন্তু এ সমস্ত সংবাদগুলোর গুরুত্ব থাকে কারণ এগুলোর পেছনে অনুসন্ধান করে অনেক সময় পুলিশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। তাহলে আমরা বলতে পারি সংবাদ যাই হোক না কেন অন্যের কাছে পৌঁছার গুরুত্ব আছে কি না সেটি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । যেটি পোঁছলে সমাজ এবং রাষ্ট্রের উপকার হবে মানুষ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে তাকে আমরা সংবাদ বলে থাকি।
যারা আমাদের কাছে এগুলো উপস্থাপন করেন তারা অনেক কষ্ট করে এগুলো আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। কোন সমাজ তাদের মূল্যায়ন করে কোন সমাজ তাদের মূল্যায়ন করে না। আবার কিছু সাংবাদিক রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির নামে সংবাদ বিনিময়ে মূল্য গ্রহণ করতেও দেখা যায় যেগুলো কোনোভাবেই কাম্য নয়। একটি সমাজ ও রাষ্ট্রকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে দরকার এক ঝাঁক নির্ভীক সংবাদকর্মী। যারা আমাদের কে সত্যের আলো দেখাবে দেখাবে মুক্তির পথ। সে আশায় থাকলাম আমরা আমাদের সাংবাদিক সমাজ নিশ্চয়ই হবে নিষ্কলুষ দলীয় শৃঙ্খলা মুক্ত। ক্ষমতা ও অর্থ লোভী প্রভাবশালীদের নিকট থেকে সমাজকে রক্ষা করবে। জাতি ও দেশকে বাঁচাতে আমরা চাই সেই রকম সংবাদ কর্মী গড়ে উঠুক প্রতিটি মফস্বল এলাকায় ও শহরে।।
- মমিন উল্লাহ্ পাটওয়ারী।।

শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যেগে ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠিত।।

 লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যেগে ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠিত।।

---------------_----------------------------------------------------------------------------------

বিগত ২রা জুলাই ২০২০ বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সেক্রেটারী আবুল খায়ের মিয়ার সভাপতিত্বে উক্ত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলার প্রধান উপদেষ্টা জনাব এস ইউ এম রুহুল আমিন ভূঁইয়া এবং প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী ও চট্টগ্রাম বিভাগ উত্তরের সভাপতি ড. এ কে এম সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী। লক্ষ্মীপুর শহর শাখার সেক্রটারী মনজুরুল ইসলাম মিরনের পরিচালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সভাপতি মমিন উল্লাহ পাটওয়ারী, জেলা সহ-সভাপতি কমলনগর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা হুমায়ুন কবির, লক্ষ্মীপুর শহর শাখার প্রধান উপদেষ্টা জনাব আবুল ফারাহ নিশান এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন চন্দ্রগ্রহণ উপজেলা সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল হাকিম, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সেক্রেটারি ডাক্তার শামসুল হুদা, ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের সমন্বিত শাখার সেক্রেটারী ডাক্তার হারুনুর রশিদ, সালাউদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল আখের ও ফখরুল ইসলাম সহ প্রমুখ।
বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে বলেন সারা পৃথিবী ব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে হজ্বের উপস্থিতি নির্দিষ্ট সংখ্যক ও সীমিত করা হয়েছিল। কম হয়েছে আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদেরকে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করুন। শ্রমিক আন্দোলনকে বেগবান করতে হলে সাধারণ শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের মৌলিক বিষয় কালেমার দাওয়াত স্পষ্ট করার জন্য শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কে আরও জোরদার ভূমিকা রাখতে হবে। পৃথিবীর ইতিহাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অনেক নবী-রাসূল শ্রমিক ছিলেন সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম নিজেও একজন শ্রমিক ছিলেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী একসময় চা বিক্রেতা ছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যারাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাদের প্রতিষ্ঠার মূল চাবিকাঠি ছিল শ্রমিক বান্ধব অর্থনীতি। আমাদের জাতিকে উন্নত করতে হলে শ্রমিকদেরকে আদর্শ নৈতিক চরিত্রের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে হবে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নত করে শ্রমিকের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে একটা রুচিশীল উন্নত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। পরিশেষে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বৈঠকের কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সাহিত্য আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র কবি মতিউর রহমান মল্লিক।।



 বাংলাদেশের সাহিত্য আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র কবি মতিউর রহমান মল্লিক।।

*******************************************************************************************
বাংলা সাহিত্য, কবিতা, গানে যে কজন কবি সাহিত্যিক তাদের নিজেদের পদচারণায় করেছেন হেরার আলোয় আলোকিত তাদের মধ্যে কবি মতিউর রহমান মল্লিক একজন। এই ধারা শুরু করেছিলেন ফররুখ আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম পরবর্তীতে কবি মতিউর রহমান মল্লিক সেই ধারার একজন যোগ্য নাবিক ছিলেন। যদিও প্রথম জীবনে কবি মতিউর রহমান মল্লিক গড্ডালিকা প্রবাহে প্রচলিত সাহিত্য নিয়ে সাহিত্য রচনা করেছিলেন। কবিতা ছড়া গান লিখে ছিলেন যার উপজীব্য ছিল নারী পুরুষের প্রেমের কাহিনী নিয়ে। প্রেমের উপরে অনেক কবিতা ছড়া রয়েছে তার । সময়ের ব্যবধানে তিনি ইসলামী শিক্ষায় আলোকিত করেন নিজেকে এবং তার গাওয়া গান ইসলামী আদর্শের প্রতীক হয়ে দেখা দেয়। সেই প্রিয় কবি মতিউর রহমান মল্লিক সম্পর্কে আমরা কিছুটা জেনে নেই।
কবি জন্ম ও প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা--
-------------------------------------------------------------
কবি মতিউর রহমান মল্লিক ১৯৫০ সালের ১লা মার্চ বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুন্সি কায়েম উদ্দিন মল্লিক স্থানীয় জারীগানের দলের জন্য গান লিখতেন।
মাতা আয়েশা বেগম। কবি ফররুখ আহমদ তৎকালীন রেডিও তে যে সাহিত্য আসর পরিচালনা করতেন সেই আসরে মল্লিকের বড় ভাই কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। পিতা মাতার সান্নিধ্যে থেকে তিনি গানের প্রাথমিক জীবন শুরু করেন। প্রাথমিক জীবনে রেডিওতে গান শুনে শুনে গান লেখা শুরু করেন। তখনকার তার প্রায় সকল গানই ছিল প্রেমের গান। পরবর্তীতে ইসলামী আদর্শে প্রভাবিত হয়ে ইসলামী ধারায় গান লেখা শুরু করেন।
শিক্ষা জীবনঃ-
--------------------
মল্লিক বারুইপাড়া সিদ্দীকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন সম্পাদনাঃ-
-----------------------------
কর্মজীবনে কবি মতিউর রহমান মল্লিক সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক, ‘বিপরীত উচ্চারণ’ সাহিত্য সংকলনও সম্পাদনা করেছেন, মাসিক কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এক কুশলী শিল্পী কে হারিয়েছে।
মতিউর রহমান মল্লিক শৈশব থেকেই বিভিন্ন ধরনের সংগঠন গড়ে তুলতে থাকেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় সমমনা সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী। তারপর একে একে তার অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশের শহর, নগর, গ্রাম, গঞ্জ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যায়ল ও মাদরাসায় গড়ে ওঠে একই ধারার অসংখ্য সাংস্কৃতিক সংগঠন। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ বিশ্বের যেখানেই বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান রয়েছে সেখানেই গড়ে উঠেছে একই ধারার বহু সাংস্কৃতিক সংগঠন। তার হাতের ছোঁয়া পেয়ে আজকে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ইসলামী জাগরণের সংগীত পরিবেশিত হচ্ছে।৷
সৃষ্টিশীল কবির সৃষ্টিকর্মঃ-
--------------------------------
কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন একজন প্রচার বিমুখ মানুষ। প্রচার বিমুখ এ ব্যক্তিটি কাজ করেছেন মানুষের জন্য, মানবতার জন্য, বিশ্বাসের জন্য। ছোট বড় সবার জন্য লিখেছেন তিনি। তার লেখা অনেক কিন্তু কমই প্রকাশিত হয়েছে। ব্যক্তিগত সফলতার চেয়ে আদর্শিক সফলতার কথাই বেশি ভেবেছেন। তার ভক্ত শুভাকাঙ্খীদের আকুল আকতিতে কথা ও সুর নিয়ে সংস্কৃতিপ্রেমীদের মাঝে উৎসাহের কারণে কিছু কাজকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেছেন।-
নীষন্ন পাখির নীড়ে (কাব্যগ্রন্থ):আত্ম প্রকাশন
সুর-শিহরণ (ইসলামি গানের বই)
যত গান গেয়েছি (ইসলামি গানের সঙ্কলন)
ঝংকার (গানের বই)
আবর্তিত তৃণলতা (কাব্যগ্রন্থ) মোনালিসা প্রকাশন
তোমার ভাষার তীক্ষ্ন ছোরা (কাব্যগ্রন্থ) বাংলা সাহিত্য পরিষদ
অনবরত বৃক্ষের গান (কাব্যগ্রন্থ) মোনালিসা প্রকাশন
চিত্রল প্রজাপতি (কাব্যগ্রন্থ) প্রফেসর’স পাবলিকেশন্স
নির্বাচিত প্রবন্ধ (প্রবন্ধের বই)
রঙিন মেঘের পালকি (ছোটদের ছড়ার বই) জ্ঞান বিতরণী
প্রতীতি এক (ইসলামি গানের ক্যাসেট)
প্রতীতি দুই (ইসলামি গানের ক্যাসেট)
প্রাণের ভিতরে প্রাণ (গীতিকাব্য) উল্লেখযোগ্য।
অনুবাদক হিসেবে তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। পাহাড়ি এক লড়াকু নামে আফগান মুজাহিদদের অমর কীর্তিকলাপ তার বিখ্যাত অনুবাদ উপন্যাস যা কিশোকণ্ঠের পাঠকরা মন উজার করে পড়তেন নিয়মিত। মহানায়ক (উপন্যাস) ছাড়াও হযরত আলী ও আল্লামা ইকবালের মতো বিশ্বখ্যাত মুসলিম কবিদের কবিতাও অনুবাদ করেছেন তিনি।
পুরস্কার ও স্বীকৃতিঃ-
---------------------------
কবি মতিউর রহমান মল্লিক বাংলা সাহিত্যে যে ভূমিকা রেখেছেন সেই ভূমিকার স্বীকৃতি আমার ব্যক্তিগত মত অনুযায়ী তিনি পাননি জানিনা কোনদিন এই জাতি তাকে সেই স্বীকৃতি দেবে কিনা। এরপরও কিছু সাহিত্য সংস্থা তাকে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত করেছে
সাহিত্যকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। কবি মতিউর রহমানের প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
সাহিত্য পুরস্কার : সবুজ-মিতালী সংঘ, বারুইপাড়া, বাগেরহাট। স্বর্ণপদক : জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, ঢাকা।
সাহিত্য পদক : কলমসেনা সাহিত্য পুরস্কার, ঢাকা।
সাহিত্য পদক : লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদ।
সাহিত্য পদক : রাঙামাটি সাহিত্য পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম। সাহিত্য পদক : খানজাহান আলী শিল্পীগোষ্ঠী, বাগেরহাট। সাহিত্য পদক : সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ।
সাহিত্য পুরস্কার : সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ, বাগেরহাট। প্যারিস সাহিত্য পুরস্কার : বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, ফ্রান্স। বায়তুশ শরফ সাহিত্য পুরস্কার : বায়তুশ শরফ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম। ইসলামী সংস্কৃতি পুরস্কার : ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রাম। সাহিত্য পুরস্কার : বাংলা সাহিত্য পরিষদ, ফ্রান্স। কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার।
কবি মতিউর রহমান মল্লিক তার কর্ম তার ব্যাপ্তি সবই ছিল ইসলামের প্রচার-প্রসার কে নিয়ে নিশ্চয়ই তিনি মহান মাবুদের নিকট সম্মানিত হবেন আমরা সেই কামনা করি রাব্বুল ইজ্জাতের নিকট।
আমার দেখায় কবিঃ-
----------------------------
উনাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি আমরা দুই তিন বার। এর মধ্যে একবারে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করেছিলাম ২০০৬ সালে ঢাকার একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে।
আসহাবে রাসুলের জীবনী নিয়ে তিনি আমাদেরকে কথা শুনিয়ে ছিলেন। তার সেই কথা শুনে আমরা আসহাবে রাসূলের জীবনের গভীরে অবগাহন করেছিলাম। কবি মতিউর রহমান মল্লিকের বক্তব্য শুনে সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম। সেই মরুপ্রান্তরে হারিয়ে গিয়েছিলাম তার কথার রেসে তার বক্তব্যের ভেতর দিয়ে অনুভব করেছিলাম হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু,হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সহ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আসহাবদের জীবন কাহিনী এত সুন্দর করে তিনি আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন আমরা বিমোহিত হয়ে সে কাহিনী শুনেছিলাম। বক্তব্যের এক ফাঁকে তিনি আমাদেরকে বললেন আজকে সকালে যখন আমি বের হচ্ছি তখন আমার বাসা থেকে বলা হয়েছিল বাসায় বাজার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুপুরে মেহমান আসবে কিন্তু আমি কাজের চাপে সব ভুলে গেছি। এখন মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই গৃহিণী বাসায় গেলে আমাকে বকাঝকা করবেন, এত সাবলীলভাবে ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা, এত সাদাসিধে মানুষ আমার জীবনে আমি খুব কমই দেখেছি। সেই প্রিয় কবি মতিউর রহমান মল্লিক এখন আর নেই প্রকৃতির নিয়মেই তিনি চলে গেছেন মহান প্রভুর দরবারে।
যেভাবে চলে গেলেন এই গুণী শিল্পীঃ-
-------------------------------------------------
মতিউর রহমান মল্লিক ১১ আগস্ট ২০১০ সালে বুধবার রাতে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনী সহ শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর ই এবং আল্লাহর কাছে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।।
মমিন উল্লাহ্ পাটওয়ারী।
লক্ষ্মীপুর।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ একটি নাসিহা

 ব্যক্তিগত জীবনে ব্যবহার্য বিষয় সম্পর্কে


রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ একটি নাসিহা আসুন আমরা সতর্কতা অবলম্বনের চেষ্টা করি।।

عَبْدَانُ عَنْ أَبِي حَمْزَةَ عَنْ الأَعْمَشِ عَنْ أَبِي صَالِحٍ عَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمْ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ رَجُلٌ عَلَى فَضْلِ مَاءٍ بِالطَّرِيقِ يَمْنَعُ مِنْهُ ابْنَ السَّبِيلِ وَرَجُلٌ بَايَعَ إِمَامًا لاَ يُبَايِعُهُ إِلاَّ لِدُنْيَاهُ إِنْ أَعْطَاهُ مَا يُرِيدُ وَفَى لَهُ وَإِلاَّ لَمْ يَفِ لَهُ وَرَجُلٌ يُبَايِعُ رَجُلاً بِسِلْعَةٍ بَعْدَ الْعَصْرِ فَحَلَفَ بِاللهِ لَقَدْ أُعْطِيَ بِهَا كَذَا وَكَذَا فَصَدَّقَهُ فَأَخَذَهَا وَلَمْ يُعْطَ بِهَا.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন রকম লোকের সঙ্গে ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ্‌ তা’আলা কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবে না, আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শান্তি। (এক) ঐ ব্যক্তি, যে পথের পাশে অতিরিক্ত পানির মালিক কিন্তু মুসাফিরকে তা থেকে পান করতে দেয় না। (দুই) ঐ ব্যক্তি যে একমাত্র দুনিয়ার স্বার্থে ইমামের বায়’আত গ্রহণ করে। (বাদশাহ্‌) ঐ লোকের মনের বাসনা পূর্ণ করলে সে তার বায়’আত পূর্ণ করে। আর যদি তা না হয়, তাহলে বায়’আত ভঙ্গ করে। (তিন) সে ব্যক্তি যে ‘আসরের পর অন্য লোকের নিকট দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয় করতে গিয়ে এমন কসম খায়ে যে, আল্লাহ্‌র শপথ! এটার এত দাম হয়েছে। ক্রেতা সেটাকে সত্য বলে বিশ্বাশ করে সে জিনিস কিনে নেয়। অথচ সে জিনিসের এত দাম হয়নি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৭০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭১৯)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৭২১২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

লক্ষ্মীপুর জেলা ও উপজেলা নামকরণের ইতিহাসঃ

 লক্ষ্মীপুর জেলা ও উপজেলা নামকরণের ইতিহাসঃ

======================================
♦লক্ষ্মীপুর_জেলা:
নামকরণ- লক্ষ্মী মানে সৌভাগ্য আর পুর মানে নগর। তাই লক্ষ্মীপুর মানে সৌভাগ্যের নগর। লক্ষ্মীপুরের প্রাচীন নাম লক্ষ্মদহ। দহ শব্দের অর্থ বদ্ধ জলাশয় বা বিশাল পুকুর। এখানে একটি বিশালাকৃতির বদ্ধ জলাশয় ছিল যেখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। মৎস্য আহরণ করে এলাকাবাসী প্রচুর অর্থ আয় করতো।
তাই লক্ষ্মী বা সৌভাগ্যের এই দহটি এলাকার সবার কাছে লক্ষ্মীদহ বা লক্ষ্মদহ নামে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করে। অন্য একটি মতে, দালাল বাজার এলাকার জমিদার রাজা গৌর কিশোর রায় চৌধুরী এর অধস্তন জমিদার লক্ষ্মীনারায়ণ রায় চৌধুরীর নামানুসারে এলাকাটির নাম হয় লক্ষ্মীপুর।
পূর্বে লক্ষ্মীপুর নামের ইংরেজি Laxmipur বা Luxmipur লেখা হলেও ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানানের রীতি অনুসরণের জন্য পরিপত্র জারি হওয়ার পর থেকে লক্ষ্মীপুর শব্দটি ইংরেজিতে Lakshmipur লেখা শুরু হয়।
♦লক্ষ্মীপুর_সদর_উপজেলা:
নামকরণ- জেলার নামকরণ অনুসারে।
♦রামগঞ্জ_উপজেলা:
নামকরণ- হিন্দু পুরাণ অনুসারে দশাবতারের অন্যতম রামচন্দ্রের নামানুসারে এলাকাটির নাম হয় রামগঞ্জ। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে এখানে থানা সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়।
♦রায়পুর_উপজেলা:
নামকরণ- জমিদার নারায়ণচন্দ্র রায় এর পদবি অনুসারে এলাকাটির নামকরণ করা হয়। অন্য একটি মতে, রাই মানে সরিষা জাতীয় এক প্রকার শস্য। এলাকাটিতে একসময় প্রচুর রায় জন্মাতো। এরজন্য রাইপুর থেকে অপভ্রংশে রায়পুর এর নামকরণ করা হয়। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে এখানে থানা সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়।
♦রামগতি_উপজেলা:
নামকরণ- রামচরণ নামে একজন ব্যবসায়ীর নামানুসারে এলাকাটির নামকরণ করা হয় রামগতি। রামচরণ এ বাজারে ব্যবসায় করে বেশ অর্থবান ও প্রভাবশালী হয়ে উঠেন। বড় বড় ব্যবসায়ীরা যেখানে বসে ব্যবসায় পরিচালনা করতো এবং টাকা পয়সা গ্রহণ করে তাকে গদি বলা হতো। এ বাজারে রামচরণের গদি ছিল সবচেয়ে বড়। এটি জনসাধারণ্যে রামগদি অপভ্রংশে এলাকাটির নাম হয় রামগতি। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে এখানে থানা সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে রামগতি বাজারটি হাতিয়া থানার অধিভুক্ত ছিল।
♦কমলনগর_উপজেলা:
নামকরণ- প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ডাক নাম কমল। কমল হতে উপজেলাটির নামকরণ করা হয় কমলনগর। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ জুন রামগতি উপজেলার কিয়দংশ নিয়ে কমলনগর উপজেলা গঠন করা হয়।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবপোর্টাল (www.lakshmipur.gov.bd), লক্ষ্মীপুরের অনলাইন সংবাদপত্র (www. Lakshmipur24.com), উইকিপিডিয়া (www.wikipedia.org), বাংলাপিডিয়া (www.banglapedia.org),

Monday, 7 September 2020

Tuesday, 11 August 2020

বাংলাদেশের সাহিত্য আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র কবি মতিউর রহমান মল্লিক।।

 বাংলাদেশের সাহিত্য আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র কবি মতিউর রহমান মল্লিক।।

*****************************************
বাংলা সাহিত্য, কবিতা, গানে যে কজন কবি সাহিত্যিক তাদের নিজেদের পদচারণায় করেছেন হেরার আলোয় আলোকিত তাদের মধ্যে কবি মতিউর রহমান মল্লিক একজন। এই ধারা শুরু করেছিলেন ফররুখ আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম পরবর্তীতে কবি মতিউর রহমান মল্লিক সেই ধারার একজন যোগ্য নাবিক ছিলেন। যদিও প্রথম জীবনে কবি মতিউর রহমান মল্লিক গড্ডালিকা প্রবাহে প্রচলিত সাহিত্য নিয়ে সাহিত্য রচনা করেছিলেন। কবিতা ছড়া গান লিখে ছিলেন যার উপজীব্য ছিল নারী পুরুষের প্রেমের কাহিনী নিয়ে। প্রেমের উপরে অনেক কবিতা ছড়া রয়েছে তার । সময়ের ব্যবধানে তিনি ইসলামী শিক্ষায় আলোকিত করেন নিজেকে এবং তার গাওয়া গান ইসলামী আদর্শের প্রতীক হয়ে দেখা দেয়। সেই প্রিয় কবি মতিউর রহমান মল্লিক সম্পর্কে আমরা কিছুটা জেনে নেই।

কবি জন্ম ও প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা--
-------------------------------------------------------------
কবি মতিউর রহমান মল্লিক ১৯৫০ সালের ১লা মার্চ বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার বারুইপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মুন্সি কায়েম উদ্দিন মল্লিক স্থানীয় জারীগানের দলের জন্য গান লিখতেন।
মাতা আয়েশা বেগম। কবি ফররুখ আহমদ তৎকালীন রেডিও তে যে সাহিত্য আসর পরিচালনা করতেন সেই আসরে মল্লিকের বড় ভাই কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন। পিতা মাতার সান্নিধ্যে থেকে তিনি গানের প্রাথমিক জীবন শুরু করেন। প্রাথমিক জীবনে রেডিওতে গান শুনে শুনে গান লেখা শুরু করেন। তখনকার তার প্রায় সকল গানই ছিল প্রেমের গান। পরবর্তীতে ইসলামী আদর্শে প্রভাবিত হয়ে ইসলামী ধারায় গান লেখা শুরু করেন।
শিক্ষা জীবনঃ-
--------------------
মল্লিক বারুইপাড়া সিদ্দীকিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এরপর বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন সম্পাদনাঃ-
-----------------------------
কর্মজীবনে কবি মতিউর রহমান মল্লিক সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক, ‘বিপরীত উচ্চারণ’ সাহিত্য সংকলনও সম্পাদনা করেছেন, মাসিক কলম পত্রিকার সম্পাদক এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ সংস্কৃতি কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এক কুশলী শিল্পী কে হারিয়েছে।
মতিউর রহমান মল্লিক শৈশব থেকেই বিভিন্ন ধরনের সংগঠন গড়ে তুলতে থাকেন। ১৯৭৮ সালে ঢাকায় সমমনা সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে গড়ে তোলেন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী। তারপর একে একে তার অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশের শহর, নগর, গ্রাম, গঞ্জ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যায়ল ও মাদরাসায় গড়ে ওঠে একই ধারার অসংখ্য সাংস্কৃতিক সংগঠন। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ বিশ্বের যেখানেই বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান রয়েছে সেখানেই গড়ে উঠেছে একই ধারার বহু সাংস্কৃতিক সংগঠন। তার হাতের ছোঁয়া পেয়ে আজকে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ইসলামী জাগরণের সংগীত পরিবেশিত হচ্ছে।৷
সৃষ্টিশীল কবির সৃষ্টিকর্মঃ-
--------------------------------
কবি মতিউর রহমান মল্লিক ছিলেন একজন প্রচার বিমুখ মানুষ। প্রচার বিমুখ এ ব্যক্তিটি কাজ করেছেন মানুষের জন্য, মানবতার জন্য, বিশ্বাসের জন্য। ছোট বড় সবার জন্য লিখেছেন তিনি। তার লেখা অনেক কিন্তু কমই প্রকাশিত হয়েছে। ব্যক্তিগত সফলতার চেয়ে আদর্শিক সফলতার কথাই বেশি ভেবেছেন। তার ভক্ত শুভাকাঙ্খীদের আকুল আকতিতে কথা ও সুর নিয়ে সংস্কৃতিপ্রেমীদের মাঝে উৎসাহের কারণে কিছু কাজকে গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেছেন।-

নীষন্ন পাখির নীড়ে (কাব্যগ্রন্থ):আত্ম প্রকাশন
সুর-শিহরণ (ইসলামি গানের বই)
যত গান গেয়েছি (ইসলামি গানের সঙ্কলন)
ঝংকার (গানের বই)
আবর্তিত তৃণলতা (কাব্যগ্রন্থ) মোনালিসা প্রকাশন
তোমার ভাষার তীক্ষ্ন ছোরা (কাব্যগ্রন্থ) বাংলা সাহিত্য পরিষদ
অনবরত বৃক্ষের গান (কাব্যগ্রন্থ) মোনালিসা প্রকাশন
চিত্রল প্রজাপতি (কাব্যগ্রন্থ) প্রফেসর’স পাবলিকেশন্স
নির্বাচিত প্রবন্ধ (প্রবন্ধের বই)
রঙিন মেঘের পালকি (ছোটদের ছড়ার বই) জ্ঞান বিতরণী
প্রতীতি এক (ইসলামি গানের ক্যাসেট)
প্রতীতি দুই (ইসলামি গানের ক্যাসেট)
প্রাণের ভিতরে প্রাণ (গীতিকাব্য) উল্লেখযোগ্য।
অনুবাদক হিসেবে তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। পাহাড়ি এক লড়াকু নামে আফগান মুজাহিদদের অমর কীর্তিকলাপ তার বিখ্যাত অনুবাদ উপন্যাস যা কিশোকণ্ঠের পাঠকরা মন উজার করে পড়তেন নিয়মিত। মহানায়ক (উপন্যাস) ছাড়াও হযরত আলী ও আল্লামা ইকবালের মতো বিশ্বখ্যাত মুসলিম কবিদের কবিতাও অনুবাদ করেছেন তিনি।

পুরস্কার ও স্বীকৃতিঃ-
---------------------------
কবি মতিউর রহমান মল্লিক বাংলা সাহিত্যে যে ভূমিকা রেখেছেন সেই ভূমিকার স্বীকৃতি আমার ব্যক্তিগত মত অনুযায়ী তিনি পাননি জানিনা কোনদিন এই জাতি তাকে সেই স্বীকৃতি দেবে কিনা। এরপরও কিছু সাহিত্য সংস্থা তাকে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত করেছে
সাহিত্যকর্মে অসাধারণ অবদানের জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। কবি মতিউর রহমানের প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননাঃ

সাহিত্য পুরস্কার : সবুজ-মিতালী সংঘ, বারুইপাড়া, বাগেরহাট। স্বর্ণপদক : জাতীয় সাহিত্য পরিষদ, ঢাকা।
সাহিত্য পদক : কলমসেনা সাহিত্য পুরস্কার, ঢাকা।
সাহিত্য পদক : লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদ।
সাহিত্য পদক : রাঙামাটি সাহিত্য পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম। সাহিত্য পদক : খানজাহান আলী শিল্পীগোষ্ঠী, বাগেরহাট। সাহিত্য পদক : সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ।
সাহিত্য পুরস্কার : সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ, বাগেরহাট। প্যারিস সাহিত্য পুরস্কার : বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি পরিষদ, ফ্রান্স। বায়তুশ শরফ সাহিত্য পুরস্কার : বায়তুশ শরফ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম। ইসলামী সংস্কৃতি পুরস্কার : ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ, চট্টগ্রাম। সাহিত্য পুরস্কার : বাংলা সাহিত্য পরিষদ, ফ্রান্স। কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার।
কবি মতিউর রহমান মল্লিক তার কর্ম তার ব্যাপ্তি সবই ছিল ইসলামের প্রচার-প্রসার কে নিয়ে নিশ্চয়ই তিনি মহান মাবুদের নিকট সম্মানিত হবেন আমরা সেই কামনা করি রাব্বুল ইজ্জাতের নিকট।

আমার দেখায় কবিঃ-
----------------------------
উনাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি আমরা দুই তিন বার। এর মধ্যে একবারে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করেছিলাম ২০০৬ সালে ঢাকার একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে।
আসহাবে রাসুলের জীবনী নিয়ে তিনি আমাদেরকে কথা শুনিয়ে ছিলেন। তার সেই কথা শুনে আমরা আসহাবে রাসূলের জীবনের গভীরে অবগাহন করেছিলাম। কবি মতিউর রহমান মল্লিকের বক্তব্য শুনে সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম। সেই মরুপ্রান্তরে হারিয়ে গিয়েছিলাম তার কথার রেসে তার বক্তব্যের ভেতর দিয়ে অনুভব করেছিলাম হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু,হজরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু সহ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আসহাবদের জীবন কাহিনী এত সুন্দর করে তিনি আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন আমরা বিমোহিত হয়ে সে কাহিনী শুনেছিলাম। বক্তব্যের এক ফাঁকে তিনি আমাদেরকে বললেন আজকে সকালে যখন আমি বের হচ্ছি তখন আমার বাসা থেকে বলা হয়েছিল বাসায় বাজার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুপুরে মেহমান আসবে কিন্তু আমি কাজের চাপে সব ভুলে গেছি। এখন মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই গৃহিণী বাসায় গেলে আমাকে বকাঝকা করবেন, এত সাবলীলভাবে ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা, এত সাদাসিধে মানুষ আমার জীবনে আমি খুব কমই দেখেছি। সেই প্রিয় কবি মতিউর রহমান মল্লিক এখন আর নেই প্রকৃতির নিয়মেই তিনি চলে গেছেন মহান প্রভুর দরবারে।

যেভাবে চলে গেলেন এই গুণী শিল্পীঃ-
-------------------------------------------------
মতিউর রহমান মল্লিক ১১ আগস্ট ২০১০ সালে বুধবার রাতে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনী সহ শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর ই এবং আল্লাহর কাছে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।।

মমিন উল্লাহ্ পাটওয়ারী।
লক্ষ্মীপুর। 

Thursday, 23 July 2020

মাওলানা মফিজুল ইসলাম রহ: যার জীবন ছিলো দ্বীনের মশাল হাতে।।

মাওলানা মফিজুল ইসলাম রহ: যার জীবন ছিলো দ্বীনের মশাল হাতে।।
-----------------------------------_-----------------------------
গত বছর এই দিনে আমরা জনাব মাওলানা মফিজুল ইসলাম ভাইকে শেষ বিদায় জানিয়ে ছিলাম। মহান আল্লাহর দরবারে সোপর্দ করেছিলাম, কবরস্থ করেছিলাম, অশ্রু জলে সেই তার জন্মভূমি শাকচরের শীতল মাটিতে। তার জানাজা প্রমান করে ছিলো তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের বাহিরে একটি বড় জগৎ তৈরি করে ছিলেন। এবং লক্ষ্মীপুর একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তার জানাজা ইসলাম আন্দোলনের কর্মীদের সহ সাধারণ মানুষের জন্যে ছিল একটি প্রেরনা। তার চরিত্রের ভালো দিক গুলো যেন আমরা আমাদের জীবনে ধারন করতে পারি সেই দিকে লক্ষ্য রেখে কিছু বিষয় লিখতে চেষ্টা করছি।
সর্বশেষ ঈদুল ফিতরের পরের (লকডাউন চলছে) দিন বিকেলে মাওলানা মফিজুর রহমান ভাই এর কবর জিয়ারতে গিয়েছিলাম আমরা হাফিজুল্লাহ ভাই, নূরনবী ভাই, মহসিন ভাই, নিশান ভাই ও রাসেল ভাই সহ আরো কিছু স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও জনশক্তি।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পূর্বে তিনি সর্বশেষ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর আগে তিনি জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে লক্ষ্মীপুর জেলার সকল জনশক্তির প্রিয় পাত্রে পরিণত হয়েছিল। ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় অর্থ বিভাগের দায়িত্ব পালন কালে ২০০১ সালে আমি উনার হাতে হাজির হাট মাদ্রাসায় সাথী শপথ নিয়েছিলাম। যেখানে দাঁড়াতেন সেই জায়গাটি আলোকিত হয়ে যেত, অন্ধকার রুমে থাকলে তাকে আলাদা চিনা যেত। বক্তৃতার ভাষা দূর থেকে বোঝা যেত যে কে বক্তব্য দিচ্ছেন, কথা বললে বোঝা যেত যে কে কথা বলছেন৷ রাজপথে বক্তব্য দেওয়ার সময় অথবা ঘরোয়া প্রোগ্রামে বক্তব্যের সময় বুঝা যেত না যে তার মুখে জড়তা ছিল। যেখানেই কথা বলতেন তার বক্তব্যের শ্রোতাদের সম্মোহিত করতে, আন্দোলনের প্রাণ সৃষ্টি করতো, নতুন করে কাজ করার প্রেরণা যোগাতো, নিষ্ক্রিয় জনশক্তি কে নতুন করে সক্রিয় করতে তার একটি যুক্তি, কুরআন-হাদীসের উপমা সত্যিই আজ ও ভুলতে পারিনি, ভুলার নয়। আজও মনের অজান্তেই খুঁজে ফিরি হয়তো মফিজ ভাই ফোন করে বলবেন মমিন ভাই ভালো আছেন আমার সাথে বিকেলে দেখা করবেন, আমি বাসায় আছি।
একবার হল কি সম্ভবত সালটা ২০১৫ হবে আমি তখন সদর উপজেলা সেক্রেটারী আমাকে বললেন আপনার রিপোর্ট বই নিয়ে আসবেন আপনার সাথে কথা আছে আসর মাগরিব এশা এক সাথে পড়লাম সম্ভবত রাত ১০ টা পর্যন্ত ছিলাম। আমার রিপোর্ট বই নিয়ে গেলাম তিনি আমার রিপোর্ট বই দেখলেন এরপরে ওনার রিপোর্ট বই আমাকে দেখালেন। কোন মন্তব্য থাকলে লেখার জন্য বললেন। আমি আশ্চর্যান্বিত হলাম জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী রিপোর্ট বইতে আমি কি মন্তব্য লিখব।
আমি কি লিখবো আর কোনদিন কোন পর্যায়ের উর্দ্ধতন দায়িত্বশীলের রিপোর্ট বই আমি দেখেছি বলে আমার মনে নেই শিবিরের কর্মী থাকার সময় একবার ভুল করে আমার শাখা সভাপতি রিপোর্ট বইটি দেখেছিলাম সেটি আমাকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য অনেক ভূমিকা রাখতো যদি আমি সেটিকে নিষ্ক্রিয় করার উপলক্ষে হিসেবে নিতাম। যাক সেদিকে যাচ্ছিনা একজন জেলা সেক্রেটারীর রিপোর্ট বইতে আমি কি লিখবো রিপোর্ট বই দেখে আমি বিমোহিত হয়েছিলাম এবং সে কথাটি অনেক জায়গায় বলেছি আজকে এখানে লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। আমি তো কখনো অধঃস্তন কাউকে আমার রিপোর্ট বই দেখাইনি বা অন্য কোনো উর্দ্ধতন দায়িত্বশীলের রিপোর্ট বই আমাকে দেখায়নি এখন পর্যন। এটি আসলে সত্যিই একটি আশ্চর্য হওয়া হওয়ার বিষয় ছিল আমার জন্য জানিনা এটি সংগঠনের ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে কিনা কিন্তু সেদিন সেই বিষয়টি আমার কাছে খুব ভাল লেগেছিল, নিজকে পেশ করার এত বড় সাহস দেখানো চাট্টিখানি বিষয় নয়। এটি কেবল তিনিই পেরে ছিলেন আমরা পারবো কিনা জানিনা। তিনি সেদিন আমাকে কিছু বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ দিয়েছিলেন। পড়ার জন্য কিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, কিছু আয়াত - হাদীস মুখস্থ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন, কিছু আলোচনা নোট করার জন্য আমাকে সুনির্দিষ্টভাবে বলছে। আমি শতভাগ সেটি করতে পারিনি কিন্তু তার সেই কন্টাক্ট এরপরে আমি অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই হাদীসটি প্রসঙ্গ ক্রমে বলতে চাই তিনি বলেন ঈমানদার রা পরস্পর আয়না স্বরুপ একে অপরের ভুল ত্রুটি সংশোধন করে দিবে। মফিজ ভাই এই ব্যাপারে পারফেক্ট ছিলেন বলে আমি মনে করি... কারো কোনো ভুল ত্রুটি জানতে পারলে তিনি তাকে অত্যন্ত সঙ্গোপনে সতর্ক করতেন, এই হাদীসের আমলের ক্ষেত্রে আমি তাকে যত্নশীল দেখেছি।
সংগঠনের প্রোগ্রামাদির ক্ষেত্রে খুবই টিপটপ এবং কম সময়ে ব্যবহার করে প্রোগ্রাম শেষ করতেন এবং অন্যদেরকেও সে ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতেন। কিন্ত একই ব্যাক্তি যখন রাজনৈতিক কমিটির মিটিং করতেন তখন আমরা লক্ষ্য করতাম রাজনৈতিক কমিটির মিটিং গুলোতে দীর্ঘ সময় নিতন, কথাবার্তা হতো ধৈর্য ধরে সকলের কথা শুনতেন তিনিও দীর্ঘ সময় ধরে বলতেন।
রাজনীতি কমিটির মিটিং এর সময় কোন নির্ধারিত থাকে না এটি অনির্ধারিত একটি মিটিং এখানে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে অনেক বড় ক্ষতি হয় তাই আপনারা যারা এ কমিটিতে আছেন তারা অত্যন্ত ধৈর্য ধরে প্রজ্ঞার সাথে সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে সংগঠনকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করবেন তাড়াহুড়া করার কোনো সুযোগ এখানে নেই।
২০১৮ সালের শেষের দিকে দিকে উনার শরীরে ক্যান্সার নামক মরণব্যাধির শনাক্ত হয় পরিবারসহ সংগঠনের ভাইয়েরা চিকিৎসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। ভারত নিয়ে গিয়েছেন কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সিদ্ধান্ত ছিল ভিন্ন। তিনি প্রিয় ভাইটিকে তার দরবারে তুলে নিয়ে গেছে।
আজকের এই সময় আমরা কায়মনোবাক্যে দোয়া করি হে আল্লাহ তুমি প্রিয় ভাইটিকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করো। তাঁর রেখে যাওয়া দ্বীনি সংগঠনের অসমাপ্ত কাজগুলো আমরা সবাই যেন আনজাম দিতে পারি সেই তাওফিক আমাদেরকে দান করুন। মহা গ্রন্থ আল কুরআনের ভাষায় বলতে চাই।
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَاۤ اِنْ نَّسِیْنَاۤ اَوْ اَخْطَاْنَاۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحْمِلْ عَلَیْنَاۤ اِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهٗ عَلَى الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِنَاۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهٖۚ وَ اعْفُ عَنَّاٙ وَ اغْفِرْ لَنَاٙ وَ ارْحَمْنَاٙ اَنْتَ مَوْلٰىنَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْك.....
হে আমাদের রব! ভুল-ভ্রান্তিতে আমরা যেসব গোনাহ করে বসি, তুমি সেগুলো পাকড়াও করো না। হে প্রভু! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না, যা তুমি আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলে। হে আমাদের প্রতিপালক! যে বোঝা বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই, তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের প্রতি কোমল হও, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি করুণা করো। তুমি আমাদের অভিভাবক। কাফেরদের মোকাবিলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো।
আমিন। ছুম্মা আমিন।।
লিখেছেন -
মমিন উল্লাহ্ পাটওয়ারী
সভাপতি
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, লক্ষ্মীপুর জেলা।।

মুহাম্মাদুর রসূল ﷺ এর জিবনে যুদ্ধসমূহ ও তার বিবরন ।।


১. বদর যুদ্ধ :
রাসূল (ﷺ) এর জীবনের প্রথম যুদ্ধ। ১৭ রমযান ৬২৪ খৃষ্টাব্দ এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধটি মদিনা থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে বদর নামক স্থানে সংগঠিত হয়। এতে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন আর কোরাইশদের সংখ্যা ছিল ১০০০ এর উপর। এই যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয় লাভ করে। এতে ৭০ কোরাইশ নিহত হয়। এই যুদ্ধে ৬ জন মুহাজির এবং ৮ জন আনসারসহ মোট ১৪ জন শাহাদাত বরণ করেন।
২. উহুদ যুদ্ধ :
৬২৫ খৃষ্টাব্দ হিজরীর তৃতীয় বর্ষে কুরাইশ দলপতি আবু সুফিয়ানের ৩০০০ সশস্ত্র সৈন্য ৩০০ উস্ট্রারোহী ও ২০০ অশ্বারোহীসহ মক্কা হইতে যুদ্ধাভিযান করে মদিনার ৫ মাইল পশ্চিমে উহুদ নামক স্থানে উপস্থিত হয়। এর প্রেক্ষিতে ১০০ জন বর্মধারী এবং প্রায় ৫০ জন তিরন্দাজসহ ১০০০ জন মুজাহিদ বাহিনী কুরাইশদের মোকাবেলা করার জন্য উহুদের দিকে অগ্রসর হন। পথিমধ্যে মোনাফেক নেতা আব্দুল্লাহ বিন উবাই তার ৩০০ জন অনুসারী নিয়ে পলায়ন করে। শেষ পর্যন্ত ৭০০ জন মুজাহিদ নিয়ে ৬২৫ খৃষ্টাব্দ ২৩ মার্চ মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যে একটি যুদ্ধ সংগঠিত হয়। উহুদ পাহাড়ের দক্ষিণে আইনায়েন পাহাড়। এই পাহাড়ে রাসূল (ﷺ) তীরন্দাজ বাহিনী সমাবেশ করেন এবং যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তাদেরকে সেখানে অবস্থান করতে বলেন। কিন্তু যুদ্ধের প্রথম দিকে মুসলমানদের বিজয় অর্জিত হলে তীরন্দাজ বাহিনী গণিমত কুড়ানোর জন্য মাঠে নেমে যায়। এই সুযোগটিকে কাফের নেতা খালিদ বিন ওয়ালিদ কাজে লাগায়। খালিদ বিন ওয়ালিদ পেছন দিক থেকে আক্রমন করে এবং মুসলমানদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। স্বয়ং রাসূল (ﷺ) এই যুদ্ধে আহত হন এবং গুজব ছড়িয়ে পড়ে তিনি নিহত হয়েছেন। এই যুদ্ধে মুসলমানদের ৭৩ জন মুজাহিদ শহীদ হন। অপরপক্ষে শত্রু পক্ষের নিহত হয় ২৩ জন।
৩. খন্দকের যুদ্ধ :
৬২৭ খৃষ্টাব্দের ৩১ শে মার্চ যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। কুরাইশ, ইহুদী ও বেদুইনদের মোট সৈন্য সংখ্যা ছিল ১০৬০০ জন। মুসলমানদের সৈন্য ছিল ৩০০০ জন। মুহাম্মদ (ﷺ) পারস্যবাসী সালমান ফারসীর পরামর্শে ৬ দিন কঠোর পরিশ্রম করে মদীনার চর্তুদিকে পরিখা খনন করেন। কুরাইশরা দীর্ঘ ২৭ দিন মদীনা অবরোধ করে রাখে। পরিখার কারনে মদীনা আক্রমনে ব্যর্থ হয়ে আবু সুফিয়ার মক্কায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
৪. হুদায়বিয়ার সন্ধি :
রাসুল ﷺ ৬২৮ খৃষ্টাব্দে মক্কায় গমনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এবং ১৪০০ সাহাবী নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বুদাইল বিন ওরাকার নিকট কুরাইশদের যুদ্ধাভিযানের কথা শুনে মক্কার নয় মাইল অদূরে হুদায়বিয়া নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন। কুরাইশদের পক্ষ থেকে ওরাকা বিন মাসুদ সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে আসেন। মুসলমানদের পক্ষে হযরত ওসমান (রাঃ) সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে পাঠান। মুসলিম শিবিরে হযরত ওসমান হত্যার রব উঠে। এতে মুসলমানগণ ক্ষুব্ধ হইয়া শপথ করে যে, ওসমান হত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে তারা ফিরে যাবেনা। মুসলমানদের এই ঘোষণা শুনে কুরাইশরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠে এবং সাথে সাথে সুহাইল বিন আমরকে সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে পাঠায়। ইতিহাসে এটা হুদায়রিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত।
সন্ধির প্রধান প্রধান শর্তগুলো হলো -
১. ৬২৮ খৃষ্টাব্দে মুসলমানদের হজ্জ না করেই মদীনা ফিরে যাবে।
২. দশ বছর সকল প্রকার যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ থাকবে ।
৩. পরের বছর মাত্র তিন দিনের জন্য মুসলমানরা হজ্জ পালন করতে আসতে পারবে।
৪. মক্কায় অবস্থান কালে মুসলমানগণ শুধু মাত্র আত্মরক্ষার কোষবদ্ধ তরবারী রাখতে পারবে।
৫. কোন মক্কবাসী মদীনায় আশ্রয় চাইলে তাকে আশ্রয় দেয়া যাবেনা।
৬. কোন মদীনা বাসী মক্কায় আসলে তাকে মক্কাবাসী ফিরৎ দিতে বাধ্য থাকবে না।
৭. সন্ধির শর্তবলী উভয় পক্ষ সমান ভাবে পালন করবে ।
৫. মদীনা সনদ :
যখন মদীনাবাসীদের মধ্যে ধর্মীয় অধঃপতন ও হতাশা, সামাজিক অসন্তোষ ও কুসংস্কার এবং রাজনৈতিক বিশৃংখলা ও অরাজকতার হাত হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্য মদীনাবাসীগণ একজন মহাপুরুষ ও ত্রানকর্তারূপে রাসূল (ﷺ) কে সম্মানের সাথে আমন্ত্রণ করে । কারণ আউস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যে ৪০ বছর ধারাবাহিক যদ্ধের কারণে মদীনাবাসীগণ সংশয়, উদ্বেগ,অস্থির হয়ে পড়ে। মদীনার এই অস্থিরতা দূর, গোত্রগুলোর ঐক্য ও সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা করার মানসে রাসূল (ﷺ) একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র স্থাপনের সংকলপ করেন । আউস ও খাজরাজ গোত্রদ্বয়কে একাত্রিত করন ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করা এবং অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিঞ্চুতার ভিত্তিতে সহনশীলতার মনোভাব গড়ে তোলার জন্য তিনি ৪৭টি শর্ত সম্বলিত একটি সনদ প্রনয়ণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে ইহা “মদিনা সনদ” নামে পরিচিত ।
নিম্মে উল্ল্যেখযোগ্য শর্তাবলী আলোচনা করা হলো ।
ক. মদীনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদী, খৃষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায়সমূহ সমান অধিকার ভোগ করবে। এবং তারা একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।
খ. রাসূল (ﷺ) নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের সভাপতি হবেন এবং পদাধিকার বলে তিনি মদীনার সর্বোচ্চ বিচারলয়ের সর্বময় কর্তা হবেন।
গ. পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
ঘ. কেউ কোরাইশদের সাথে কোন প্রকার সন্ধি করতে পারবে না। কিংবা মদীনা বাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কোরাইশদেরকে সাহায্য করতে পারবে না।
ঙ. সম্প্রদায়কে বহি:শত্রু আক্রমন করলে সকল সম্প্রদায়ের লোকেরা সমবেত প্রচেষ্টায় তা প্রতিহত করবে।
চ. বহিঃশত্রুর আক্রমনে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়সমূহ স্ব স্ব যুদ্ধ ব্যয়ভার বহন করবে।
ছ. কোন ব্যক্তি অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত বলে গণ্য হবে। অপরাধের সম্প্রদায়কে দোষী করা যাবে না।
জ. মদীনা শহরকে পবিত্র ঘোষনা করা হলো। এতে কোন হত্যা, রক্তপাত এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলবে না।
ঝ. অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে। সর্বপ্রকার অপরাধীকে ঘৃনার চোখে দেখবে।
ঞ. ইহুদী মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা পাবে ও স্বাধীনতা ভোগ করবে।
ট. দূর্বল ও অসহায়কে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করতে হবে।
ঠ. রাসূল (ﷺ) এর অনুমতি ছাড়া মদীনা বাসীগণ কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে পারবে না।
ড. সম্প্রদায়দের মধ্যে কোন বিরোধ দেখা দিলে রাসূল (ﷺ) আল্লাহর বিধান অনুসারে মীমাংসা করবেন।
ঢ. সনদের শর্ত ভঙ্গকারীর উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হইবে।
৬. খাইবারের যুদ্ধ :
৬২৮ খৃষ্টাব্দে মে মাসে ৭ম হিজরীর মহররম মাসে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয় । ইহুদীরা বেদুঈন গোত্রের সহযোগীতায় ৪০০০ চার হাজার সৈন্য নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় । রাসূল (ﷺ) ২০০ অশ্বরোহীসহ ১,৬০০ মুসলিম যোদ্ধা প্রেরণ করেন। খাইবার ও বনু ঘাতফানদের মধ্যে যাতায়াত বন্ধের মাধ্যমে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় । দীর্ঘ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর ইহুদীরা আত্মসর্মপন করতে বাধ্য হয় ।
উল্লেখ্য এই যুদ্ধে আলী রা. আসাদুল্লাহ উপাদি লাভ করেন ।
৭. মুতার যুদ্ধ :
মুতার যুদ্ধ ৬২৯ খৃষ্টাব্দে (৮হিজরীর জমাদিউল উলা মাসে) সংগঠিত হয় । রাসূল (ﷺ) এর দূত হারিস বিন উমাইয়াকে মুতায় নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় । এই হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য রাসূল ﷺ ৩,০০০ (তিন হাজার) সৈন্যের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন । এ যুদ্ধে বিশিষ্ট তিন জন সেনাপতি সাহাবী (যায়েদ, জাফর, আব্দুল্লাহ ) শাহাদাৎ বরন করেন । এক লক্ষাধিক রোমান সৈন্যের মোকাবেলায় মাত্র ৩,০০০ (তিন হাজার) সৈন্য বিপর্যয়ের মুখে পড়লে বীরশ্রেষ্ঠ খালিদ বিন ওয়ালিদ সমূহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন । বীরত্বের জন্য খালিদ বিন ওয়ালিদকে সাইফুল্লাহ উপাধি লাভ করেন।
৮. হুনাইনের যুদ্ধ :
৬৩০ খৃষ্টাব্দে ২৭শে জানুয়ারী ৮ম হিজরীতে হুনাইনের যুদ্ধ সংগঠিত হয় । মক্কার তিন মাইল দূরে হুনাইন নামক স্থানে ২০,০০০ সৈন্য নিয়ে বেদুইনরা সমাবেশ করে । বীর শ্রেষ্ঠ খালিদ বিন ওয়ালিদ এর নেতৃত্বে ১২,০০০ সৈন্য হুনাইন প্রান্তরে যুদ্ধে উপনিত হয় । এই যুদ্ধে ৬০০০ সৈন্য মুসলমানদের হাতে বন্দি হয় ।
৯. তাবুক অভিযান :
এটি ছিল রাসূল (ﷺ) এর জীবনের সর্বশেষ অভিযান। ৬৩০ খৃষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে (৯ হিজরীর রজব মাস) লক্ষাধিক সৈন্যসহ বায়জানটাইন বাহিনী মদীনার দিকে রওনা হয়। মুসলিম বাহিনীতে ১০০০ অশ্বারোহী ও ৩০০০ পদাতিক সৈন্যসহ মোট ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) সৈন্য ছিল। এই যুদ্ধে আবু বকর (রা.) তার সমস্ত সম্পদ দান করেন, হযরত ওমর তাঁর জীবনের অর্জিত সম্পদের অর্ধেক দান করেন, হযরত ওসমান (রা.) ও আব্দুর রহমান ইবনে আউফসহ সকলে বিপুল পরিমাণ সাহায্য করে। মহিলারা তাদের গহনা খুলে দিয়ে নযরানা পেশ করেন। এই সময়টিতে- দেশে চলছিল দুর্ভীক্ষ, আবহাওয়া ছিল প্রচন্ড গরম, ফসল কাটার সময় কাছে এসে গিয়েছিল, সওয়ারী ও সাজসরন্জামের ব্যবস্থা করা ছিল খুবই কঠিন। তথাপিও মুসলমানদের জন্য ছিল এটি অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন! বিধায় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর জন্য কোনভাবে পিছপা হওয়ার সুযোগ সামনে ছিল না। অবশেষে রোমান বাহিনী মুতার যুদ্ধের ভয়াবহ পরিনতির কথা স্বরন করে নিজেতের সৈন্যবাহিনী গুটিয়ে নেয়। ফলে এ অভিযানে যুদ্ধের কোন প্রয়োজন হয়নি।
Adv Mohsin Kabir Murad, Rajib Dewan and 62 others
15 Shares
Like
Comment
Share