মাওলানা মফিজুল ইসলাম রহ: যার জীবন ছিলো দ্বীনের মশাল হাতে।।
-----------------------------------_-----------------------------
গত বছর এই দিনে আমরা জনাব মাওলানা মফিজুল ইসলাম ভাইকে শেষ বিদায় জানিয়ে ছিলাম। মহান আল্লাহর দরবারে সোপর্দ করেছিলাম, কবরস্থ করেছিলাম, অশ্রু জলে সেই তার জন্মভূমি শাকচরের শীতল মাটিতে। তার জানাজা প্রমান করে ছিলো তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের বাহিরে একটি বড় জগৎ তৈরি করে ছিলেন। এবং লক্ষ্মীপুর একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তার জানাজা ইসলাম আন্দোলনের কর্মীদের সহ সাধারণ মানুষের জন্যে ছিল একটি প্রেরনা। তার চরিত্রের ভালো দিক গুলো যেন আমরা আমাদের জীবনে ধারন করতে পারি সেই দিকে লক্ষ্য রেখে কিছু বিষয় লিখতে চেষ্টা করছি।
সর্বশেষ ঈদুল ফিতরের পরের (লকডাউন চলছে) দিন বিকেলে মাওলানা মফিজুর রহমান ভাই এর কবর জিয়ারতে গিয়েছিলাম আমরা হাফিজুল্লাহ ভাই, নূরনবী ভাই, মহসিন ভাই, নিশান ভাই ও রাসেল ভাই সহ আরো কিছু স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও জনশক্তি।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পূর্বে তিনি সর্বশেষ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর আগে তিনি জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে লক্ষ্মীপুর জেলার সকল জনশক্তির প্রিয় পাত্রে পরিণত হয়েছিল। ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় অর্থ বিভাগের দায়িত্ব পালন কালে ২০০১ সালে আমি উনার হাতে হাজির হাট মাদ্রাসায় সাথী শপথ নিয়েছিলাম। যেখানে দাঁড়াতেন সেই জায়গাটি আলোকিত হয়ে যেত, অন্ধকার রুমে থাকলে তাকে আলাদা চিনা যেত। বক্তৃতার ভাষা দূর থেকে বোঝা যেত যে কে বক্তব্য দিচ্ছেন, কথা বললে বোঝা যেত যে কে কথা বলছেন৷ রাজপথে বক্তব্য দেওয়ার সময় অথবা ঘরোয়া প্রোগ্রামে বক্তব্যের সময় বুঝা যেত না যে তার মুখে জড়তা ছিল। যেখানেই কথা বলতেন তার বক্তব্যের শ্রোতাদের সম্মোহিত করতে, আন্দোলনের প্রাণ সৃষ্টি করতো, নতুন করে কাজ করার প্রেরণা যোগাতো, নিষ্ক্রিয় জনশক্তি কে নতুন করে সক্রিয় করতে তার একটি যুক্তি, কুরআন-হাদীসের উপমা সত্যিই আজ ও ভুলতে পারিনি, ভুলার নয়। আজও মনের অজান্তেই খুঁজে ফিরি হয়তো মফিজ ভাই ফোন করে বলবেন মমিন ভাই ভালো আছেন আমার সাথে বিকেলে দেখা করবেন, আমি বাসায় আছি।
একবার হল কি সম্ভবত সালটা ২০১৫ হবে আমি তখন সদর উপজেলা সেক্রেটারী আমাকে বললেন আপনার রিপোর্ট বই নিয়ে আসবেন আপনার সাথে কথা আছে আসর মাগরিব এশা এক সাথে পড়লাম সম্ভবত রাত ১০ টা পর্যন্ত ছিলাম। আমার রিপোর্ট বই নিয়ে গেলাম তিনি আমার রিপোর্ট বই দেখলেন এরপরে ওনার রিপোর্ট বই আমাকে দেখালেন। কোন মন্তব্য থাকলে লেখার জন্য বললেন। আমি আশ্চর্যান্বিত হলাম জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী রিপোর্ট বইতে আমি কি মন্তব্য লিখব।
আমি কি লিখবো আর কোনদিন কোন পর্যায়ের উর্দ্ধতন দায়িত্বশীলের রিপোর্ট বই আমি দেখেছি বলে আমার মনে নেই শিবিরের কর্মী থাকার সময় একবার ভুল করে আমার শাখা সভাপতি রিপোর্ট বইটি দেখেছিলাম সেটি আমাকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য অনেক ভূমিকা রাখতো যদি আমি সেটিকে নিষ্ক্রিয় করার উপলক্ষে হিসেবে নিতাম। যাক সেদিকে যাচ্ছিনা একজন জেলা সেক্রেটারীর রিপোর্ট বইতে আমি কি লিখবো রিপোর্ট বই দেখে আমি বিমোহিত হয়েছিলাম এবং সে কথাটি অনেক জায়গায় বলেছি আজকে এখানে লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। আমি তো কখনো অধঃস্তন কাউকে আমার রিপোর্ট বই দেখাইনি বা অন্য কোনো উর্দ্ধতন দায়িত্বশীলের রিপোর্ট বই আমাকে দেখায়নি এখন পর্যন। এটি আসলে সত্যিই একটি আশ্চর্য হওয়া হওয়ার বিষয় ছিল আমার জন্য জানিনা এটি সংগঠনের ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে কিনা কিন্তু সেদিন সেই বিষয়টি আমার কাছে খুব ভাল লেগেছিল, নিজকে পেশ করার এত বড় সাহস দেখানো চাট্টিখানি বিষয় নয়। এটি কেবল তিনিই পেরে ছিলেন আমরা পারবো কিনা জানিনা। তিনি সেদিন আমাকে কিছু বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ দিয়েছিলেন। পড়ার জন্য কিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, কিছু আয়াত - হাদীস মুখস্থ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন, কিছু আলোচনা নোট করার জন্য আমাকে সুনির্দিষ্টভাবে বলছে। আমি শতভাগ সেটি করতে পারিনি কিন্তু তার সেই কন্টাক্ট এরপরে আমি অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই হাদীসটি প্রসঙ্গ ক্রমে বলতে চাই তিনি বলেন ঈমানদার রা পরস্পর আয়না স্বরুপ একে অপরের ভুল ত্রুটি সংশোধন করে দিবে। মফিজ ভাই এই ব্যাপারে পারফেক্ট ছিলেন বলে আমি মনে করি... কারো কোনো ভুল ত্রুটি জানতে পারলে তিনি তাকে অত্যন্ত সঙ্গোপনে সতর্ক করতেন, এই হাদীসের আমলের ক্ষেত্রে আমি তাকে যত্নশীল দেখেছি।
সংগঠনের প্রোগ্রামাদির ক্ষেত্রে খুবই টিপটপ এবং কম সময়ে ব্যবহার করে প্রোগ্রাম শেষ করতেন এবং অন্যদেরকেও সে ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতেন। কিন্ত একই ব্যাক্তি যখন রাজনৈতিক কমিটির মিটিং করতেন তখন আমরা লক্ষ্য করতাম রাজনৈতিক কমিটির মিটিং গুলোতে দীর্ঘ সময় নিতন, কথাবার্তা হতো ধৈর্য ধরে সকলের কথা শুনতেন তিনিও দীর্ঘ সময় ধরে বলতেন।
রাজনীতি কমিটির মিটিং এর সময় কোন নির্ধারিত থাকে না এটি অনির্ধারিত একটি মিটিং এখানে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে অনেক বড় ক্ষতি হয় তাই আপনারা যারা এ কমিটিতে আছেন তারা অত্যন্ত ধৈর্য ধরে প্রজ্ঞার সাথে সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে সংগঠনকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করবেন তাড়াহুড়া করার কোনো সুযোগ এখানে নেই।
২০১৮ সালের শেষের দিকে দিকে উনার শরীরে ক্যান্সার নামক মরণব্যাধির শনাক্ত হয় পরিবারসহ সংগঠনের ভাইয়েরা চিকিৎসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। ভারত নিয়ে গিয়েছেন কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সিদ্ধান্ত ছিল ভিন্ন। তিনি প্রিয় ভাইটিকে তার দরবারে তুলে নিয়ে গেছে।
আজকের এই সময় আমরা কায়মনোবাক্যে দোয়া করি হে আল্লাহ তুমি প্রিয় ভাইটিকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করো। তাঁর রেখে যাওয়া দ্বীনি সংগঠনের অসমাপ্ত কাজগুলো আমরা সবাই যেন আনজাম দিতে পারি সেই তাওফিক আমাদেরকে দান করুন। মহা গ্রন্থ আল কুরআনের ভাষায় বলতে চাই।
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَاۤ اِنْ نَّسِیْنَاۤ اَوْ اَخْطَاْنَاۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحْمِلْ عَلَیْنَاۤ اِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهٗ عَلَى الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِنَاۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهٖۚ وَ اعْفُ عَنَّاٙ وَ اغْفِرْ لَنَاٙ وَ ارْحَمْنَاٙ اَنْتَ مَوْلٰىنَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْك.....
হে আমাদের রব! ভুল-ভ্রান্তিতে আমরা যেসব গোনাহ করে বসি, তুমি সেগুলো পাকড়াও করো না। হে প্রভু! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না, যা তুমি আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলে। হে আমাদের প্রতিপালক! যে বোঝা বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই, তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের প্রতি কোমল হও, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি করুণা করো। তুমি আমাদের অভিভাবক। কাফেরদের মোকাবিলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো।
আমিন। ছুম্মা আমিন।।
লিখেছেন -
মমিন উল্লাহ্ পাটওয়ারী
সভাপতি
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, লক্ষ্মীপুর জেলা।।
No comments:
Post a Comment