বৃষ্টি প্রার্থনায় ইসতিসকার স্বলাত সংক্রান্ত।।
====================================
বাংলাদেশ একটি ঋতু বৈচিত্রের দেশ। নিকট অতীতে দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রকৃতি অনেকটা চরমভাবাপন্ন আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে যখন শীত আসে তখন প্রচুর শীত যা এদেশের মানুষের সহ্য ক্ষমতার বাইরে লক্ষ্য করা যায়। এবং যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন বৃষ্টির পরিমাণ এত বেশি থাকে যে বন্যা এবং অতিবৃষ্টিতে নদী-নালা-খাল-বিল ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়। আন্তর্জাতিক প্রকৃতির ও এই চরমভাবাপন্ন আকৃতি সারাবিশ্বব্যাপী বহমান, চলমান, বিরাজমান রুপ পরী গ্রহ করছে।
একদিকে চলছে সারা পৃথিবীব্যাপী কোভিড - ১৯ এর সর্বগ্রাসী হামলা। অন্যদিকে ব্যাপক খরতাপে পুড়ছে আমাদের দেশের পরিবেশ। এই খরতাপে রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নামের আগুনের সাথে তুলনা করেছেন এবং এ সময় বেশি বেশি সালাত আদায় করার নির্দেশনা তিনি দিতেন এবং নিজে ও আদায় করতেন বিশুদ্ধ হাদীসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। এছাড়া তিনি প্রচুর খরতাপ এবং অনাবৃষ্টির সময় দীর্ঘায়িত হলে এস্তেস্কার স্বলাত আদায় করতেন।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) তার কোনো দুআয় হাত উঠাতেন না। কেবল ইস্তিসকায় হাত উঠাতেন। এমনকি এতে তাঁর বগলের শুভ্রতা পরিদৃষ্ট হতো। তবে আবদুল আ’লা তাঁর বর্ণনায় বলেছেন।
কাতাদা থেকে বর্ণিত। আনাস ইবনে মালিক (রা.) তাঁদের নবী (সা.) থেকে উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করে শুনিয়েছেন।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি জুমার দিন মসজিদে নব্বীতে দারুল কাযার দিকে স্থাপিত দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। সে রাসূলুল্লাহর (সা.) দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! (অনাবৃষ্টির ফলে) মালসম্পদ বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন তিনি আমাদের মেঘদান করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই হাত উঠিয়ে দুআ করলেন,''হে আল্লাহ! আমাদের মেঘ দিন। ’’ (আমাদের ফরিয়াদ শুনুন! আমাদের ফরিয়াদ শুনুন!) আনাস (রা.) বলেন, খোদার কসম! এসময় আসমানে কোনো মেঘ বা মেঘের চিহ্নও ছিলনা। আর আমাদের ও সালা’ পাহাড়ের মাঝে কোনো ঘর-বাড়ি কিছুই ছিলনা। (ক্ষণিকের মধ্যে) তাঁর পেছন থেকে ঢালের ন্যায় একখ- মেঘ উদিত হলো। একটু পর তা মাঝ আকাশে এলে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং বৃষ্টি শুরু হলো। রাবীদ্বয় বলেন, এরপর খোদার কসম, আমরা সপ্তাহকার যাবৎ আর সূর্যের মুখ দেখিনি। অতঃপর পরবর্তী জুমায় আবার এক ব্যক্তি ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ (সা.) দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। সে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! মাল সম্পদ সব বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অতএব আল্লাহর কাছে দুআ করুন যেন বষ্টিপাত বন্ধ করে দেন। রাবী বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আবার হাত উঠিয়ে দুআ করলেন, ''হে আল্লাহ! আমাদের অবস্থা পাল্টে দাও আমাদের ওপর এ অবস্থা চাপিয়ে দিওনা। হে আল্লাহ! পাহাড়ি এলাকায়, মালভূমিতে মাঠের অভ্যন্তরে ও গাছপালা গজানোস্থলে তা ফিরিয়ে নিয়ে যাও। ’’ এরপর বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে গেল। আমরা বের হয়ে সূর্য কিরণে হাঁটাচলা করতে লাগলাম। শরীক বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিককে (রা.) জিজ্ঞেস করলাম এ ব্যক্তি কি প্রথম ব্যক্তি। আনাস (রা.) বললেন, আমার জানা নেই।
আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যামানায় মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হলো। ওই সময় একদিন জুমার দিনে রাসূলুল্লাহ (সা.) মিম্বরে উপবিষ্ট হয়ে লোকদের সামনে জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন। এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.)! ধনসম্পদ বরবাদ হয়ে গেল, সন্তান সন্ততি ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েছে। অবশিষ্ট হাদীস পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। এ বর্ণনায় আরও আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ''আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা-আলাইনা’’ রাবী বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) হাত দিয়ে যেদিকেই ইশারা করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে সেদিক ফর্সা হয়ে গেছে। এমনকি আমি মদীনাকে আয়নার ন্যায় পরিষ্কার দেখতে পেলাম। এদিকে, ''কানাত’’ নামক প্রান্তরে একমাস যাবত পানির ধারা বয়ে গেল। যে কোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ এসেছে সে-ই অতি বৃষ্টির সংবাদ দিয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে আবু বাকর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি আব্বাদ ইবনে তামীমকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ মাযেনীকে বলতে শুনেছি- রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজের নির্ধারিত স্থানে চলে গেলেন এবং সেখানে পৌঁছে ইসতেসকার নামাজ পড়লেন। যখন কেবলামুখী হলেন, তিনি তাঁর চাদরটা উল্টিয়ে নিলেন।
সহীহ মুসলিম শরীফ ৩য় খণ্ড দশম অধ্যায় (ইস্তিসকার বা বৃষ্টির নামাজ) ১৯৪৭-১৯৫৬।
তাই এখন সময়ের দাবি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম এর সুন্নত কে অনুসরণ করে ইসতেসকার সালাতের আয়োজন করা। আশা করি দেশের ওলামা সমাজ এ দিকে মনোযোগী হবেন এবং যাদের দায়িত্ব আছে তারা অবশ্যই দায়িত্ব পালন করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি।।
বিনীত
মমিন উল্যাহ্ পাটওয়ারী।।
No comments:
Post a Comment