Thursday, 23 July 2020

মাওলানা মফিজুল ইসলাম রহ: যার জীবন ছিলো দ্বীনের মশাল হাতে।।

মাওলানা মফিজুল ইসলাম রহ: যার জীবন ছিলো দ্বীনের মশাল হাতে।।
-----------------------------------_-----------------------------
গত বছর এই দিনে আমরা জনাব মাওলানা মফিজুল ইসলাম ভাইকে শেষ বিদায় জানিয়ে ছিলাম। মহান আল্লাহর দরবারে সোপর্দ করেছিলাম, কবরস্থ করেছিলাম, অশ্রু জলে সেই তার জন্মভূমি শাকচরের শীতল মাটিতে। তার জানাজা প্রমান করে ছিলো তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের বাহিরে একটি বড় জগৎ তৈরি করে ছিলেন। এবং লক্ষ্মীপুর একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তার জানাজা ইসলাম আন্দোলনের কর্মীদের সহ সাধারণ মানুষের জন্যে ছিল একটি প্রেরনা। তার চরিত্রের ভালো দিক গুলো যেন আমরা আমাদের জীবনে ধারন করতে পারি সেই দিকে লক্ষ্য রেখে কিছু বিষয় লিখতে চেষ্টা করছি।
সর্বশেষ ঈদুল ফিতরের পরের (লকডাউন চলছে) দিন বিকেলে মাওলানা মফিজুর রহমান ভাই এর কবর জিয়ারতে গিয়েছিলাম আমরা হাফিজুল্লাহ ভাই, নূরনবী ভাই, মহসিন ভাই, নিশান ভাই ও রাসেল ভাই সহ আরো কিছু স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও জনশক্তি।
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পূর্বে তিনি সর্বশেষ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর আগে তিনি জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে লক্ষ্মীপুর জেলার সকল জনশক্তির প্রিয় পাত্রে পরিণত হয়েছিল। ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় অর্থ বিভাগের দায়িত্ব পালন কালে ২০০১ সালে আমি উনার হাতে হাজির হাট মাদ্রাসায় সাথী শপথ নিয়েছিলাম। যেখানে দাঁড়াতেন সেই জায়গাটি আলোকিত হয়ে যেত, অন্ধকার রুমে থাকলে তাকে আলাদা চিনা যেত। বক্তৃতার ভাষা দূর থেকে বোঝা যেত যে কে বক্তব্য দিচ্ছেন, কথা বললে বোঝা যেত যে কে কথা বলছেন৷ রাজপথে বক্তব্য দেওয়ার সময় অথবা ঘরোয়া প্রোগ্রামে বক্তব্যের সময় বুঝা যেত না যে তার মুখে জড়তা ছিল। যেখানেই কথা বলতেন তার বক্তব্যের শ্রোতাদের সম্মোহিত করতে, আন্দোলনের প্রাণ সৃষ্টি করতো, নতুন করে কাজ করার প্রেরণা যোগাতো, নিষ্ক্রিয় জনশক্তি কে নতুন করে সক্রিয় করতে তার একটি যুক্তি, কুরআন-হাদীসের উপমা সত্যিই আজ ও ভুলতে পারিনি, ভুলার নয়। আজও মনের অজান্তেই খুঁজে ফিরি হয়তো মফিজ ভাই ফোন করে বলবেন মমিন ভাই ভালো আছেন আমার সাথে বিকেলে দেখা করবেন, আমি বাসায় আছি।
একবার হল কি সম্ভবত সালটা ২০১৫ হবে আমি তখন সদর উপজেলা সেক্রেটারী আমাকে বললেন আপনার রিপোর্ট বই নিয়ে আসবেন আপনার সাথে কথা আছে আসর মাগরিব এশা এক সাথে পড়লাম সম্ভবত রাত ১০ টা পর্যন্ত ছিলাম। আমার রিপোর্ট বই নিয়ে গেলাম তিনি আমার রিপোর্ট বই দেখলেন এরপরে ওনার রিপোর্ট বই আমাকে দেখালেন। কোন মন্তব্য থাকলে লেখার জন্য বললেন। আমি আশ্চর্যান্বিত হলাম জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী রিপোর্ট বইতে আমি কি মন্তব্য লিখব।
আমি কি লিখবো আর কোনদিন কোন পর্যায়ের উর্দ্ধতন দায়িত্বশীলের রিপোর্ট বই আমি দেখেছি বলে আমার মনে নেই শিবিরের কর্মী থাকার সময় একবার ভুল করে আমার শাখা সভাপতি রিপোর্ট বইটি দেখেছিলাম সেটি আমাকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য অনেক ভূমিকা রাখতো যদি আমি সেটিকে নিষ্ক্রিয় করার উপলক্ষে হিসেবে নিতাম। যাক সেদিকে যাচ্ছিনা একজন জেলা সেক্রেটারীর রিপোর্ট বইতে আমি কি লিখবো রিপোর্ট বই দেখে আমি বিমোহিত হয়েছিলাম এবং সে কথাটি অনেক জায়গায় বলেছি আজকে এখানে লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। আমি তো কখনো অধঃস্তন কাউকে আমার রিপোর্ট বই দেখাইনি বা অন্য কোনো উর্দ্ধতন দায়িত্বশীলের রিপোর্ট বই আমাকে দেখায়নি এখন পর্যন। এটি আসলে সত্যিই একটি আশ্চর্য হওয়া হওয়ার বিষয় ছিল আমার জন্য জানিনা এটি সংগঠনের ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে কিনা কিন্তু সেদিন সেই বিষয়টি আমার কাছে খুব ভাল লেগেছিল, নিজকে পেশ করার এত বড় সাহস দেখানো চাট্টিখানি বিষয় নয়। এটি কেবল তিনিই পেরে ছিলেন আমরা পারবো কিনা জানিনা। তিনি সেদিন আমাকে কিছু বিষয় দৃষ্টি আকর্ষণ দিয়েছিলেন। পড়ার জন্য কিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন, কিছু আয়াত - হাদীস মুখস্থ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন, কিছু আলোচনা নোট করার জন্য আমাকে সুনির্দিষ্টভাবে বলছে। আমি শতভাগ সেটি করতে পারিনি কিন্তু তার সেই কন্টাক্ট এরপরে আমি অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই হাদীসটি প্রসঙ্গ ক্রমে বলতে চাই তিনি বলেন ঈমানদার রা পরস্পর আয়না স্বরুপ একে অপরের ভুল ত্রুটি সংশোধন করে দিবে। মফিজ ভাই এই ব্যাপারে পারফেক্ট ছিলেন বলে আমি মনে করি... কারো কোনো ভুল ত্রুটি জানতে পারলে তিনি তাকে অত্যন্ত সঙ্গোপনে সতর্ক করতেন, এই হাদীসের আমলের ক্ষেত্রে আমি তাকে যত্নশীল দেখেছি।
সংগঠনের প্রোগ্রামাদির ক্ষেত্রে খুবই টিপটপ এবং কম সময়ে ব্যবহার করে প্রোগ্রাম শেষ করতেন এবং অন্যদেরকেও সে ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতেন। কিন্ত একই ব্যাক্তি যখন রাজনৈতিক কমিটির মিটিং করতেন তখন আমরা লক্ষ্য করতাম রাজনৈতিক কমিটির মিটিং গুলোতে দীর্ঘ সময় নিতন, কথাবার্তা হতো ধৈর্য ধরে সকলের কথা শুনতেন তিনিও দীর্ঘ সময় ধরে বলতেন।
রাজনীতি কমিটির মিটিং এর সময় কোন নির্ধারিত থাকে না এটি অনির্ধারিত একটি মিটিং এখানে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে অনেক বড় ক্ষতি হয় তাই আপনারা যারা এ কমিটিতে আছেন তারা অত্যন্ত ধৈর্য ধরে প্রজ্ঞার সাথে সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে সংগঠনকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করবেন তাড়াহুড়া করার কোনো সুযোগ এখানে নেই।
২০১৮ সালের শেষের দিকে দিকে উনার শরীরে ক্যান্সার নামক মরণব্যাধির শনাক্ত হয় পরিবারসহ সংগঠনের ভাইয়েরা চিকিৎসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। ভারত নিয়ে গিয়েছেন কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সিদ্ধান্ত ছিল ভিন্ন। তিনি প্রিয় ভাইটিকে তার দরবারে তুলে নিয়ে গেছে।
আজকের এই সময় আমরা কায়মনোবাক্যে দোয়া করি হে আল্লাহ তুমি প্রিয় ভাইটিকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করো। তাঁর রেখে যাওয়া দ্বীনি সংগঠনের অসমাপ্ত কাজগুলো আমরা সবাই যেন আনজাম দিতে পারি সেই তাওফিক আমাদেরকে দান করুন। মহা গ্রন্থ আল কুরআনের ভাষায় বলতে চাই।
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَاۤ اِنْ نَّسِیْنَاۤ اَوْ اَخْطَاْنَاۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحْمِلْ عَلَیْنَاۤ اِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهٗ عَلَى الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِنَاۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهٖۚ وَ اعْفُ عَنَّاٙ وَ اغْفِرْ لَنَاٙ وَ ارْحَمْنَاٙ اَنْتَ مَوْلٰىنَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْك.....
হে আমাদের রব! ভুল-ভ্রান্তিতে আমরা যেসব গোনাহ করে বসি, তুমি সেগুলো পাকড়াও করো না। হে প্রভু! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না, যা তুমি আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলে। হে আমাদের প্রতিপালক! যে বোঝা বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই, তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের প্রতি কোমল হও, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি করুণা করো। তুমি আমাদের অভিভাবক। কাফেরদের মোকাবিলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো।
আমিন। ছুম্মা আমিন।।
লিখেছেন -
মমিন উল্লাহ্ পাটওয়ারী
সভাপতি
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, লক্ষ্মীপুর জেলা।।

মুহাম্মাদুর রসূল ﷺ এর জিবনে যুদ্ধসমূহ ও তার বিবরন ।।


১. বদর যুদ্ধ :
রাসূল (ﷺ) এর জীবনের প্রথম যুদ্ধ। ১৭ রমযান ৬২৪ খৃষ্টাব্দ এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধটি মদিনা থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে বদর নামক স্থানে সংগঠিত হয়। এতে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৩১৩ জন আর কোরাইশদের সংখ্যা ছিল ১০০০ এর উপর। এই যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয় লাভ করে। এতে ৭০ কোরাইশ নিহত হয়। এই যুদ্ধে ৬ জন মুহাজির এবং ৮ জন আনসারসহ মোট ১৪ জন শাহাদাত বরণ করেন।
২. উহুদ যুদ্ধ :
৬২৫ খৃষ্টাব্দ হিজরীর তৃতীয় বর্ষে কুরাইশ দলপতি আবু সুফিয়ানের ৩০০০ সশস্ত্র সৈন্য ৩০০ উস্ট্রারোহী ও ২০০ অশ্বারোহীসহ মক্কা হইতে যুদ্ধাভিযান করে মদিনার ৫ মাইল পশ্চিমে উহুদ নামক স্থানে উপস্থিত হয়। এর প্রেক্ষিতে ১০০ জন বর্মধারী এবং প্রায় ৫০ জন তিরন্দাজসহ ১০০০ জন মুজাহিদ বাহিনী কুরাইশদের মোকাবেলা করার জন্য উহুদের দিকে অগ্রসর হন। পথিমধ্যে মোনাফেক নেতা আব্দুল্লাহ বিন উবাই তার ৩০০ জন অনুসারী নিয়ে পলায়ন করে। শেষ পর্যন্ত ৭০০ জন মুজাহিদ নিয়ে ৬২৫ খৃষ্টাব্দ ২৩ মার্চ মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যে একটি যুদ্ধ সংগঠিত হয়। উহুদ পাহাড়ের দক্ষিণে আইনায়েন পাহাড়। এই পাহাড়ে রাসূল (ﷺ) তীরন্দাজ বাহিনী সমাবেশ করেন এবং যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তাদেরকে সেখানে অবস্থান করতে বলেন। কিন্তু যুদ্ধের প্রথম দিকে মুসলমানদের বিজয় অর্জিত হলে তীরন্দাজ বাহিনী গণিমত কুড়ানোর জন্য মাঠে নেমে যায়। এই সুযোগটিকে কাফের নেতা খালিদ বিন ওয়ালিদ কাজে লাগায়। খালিদ বিন ওয়ালিদ পেছন দিক থেকে আক্রমন করে এবং মুসলমানদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। স্বয়ং রাসূল (ﷺ) এই যুদ্ধে আহত হন এবং গুজব ছড়িয়ে পড়ে তিনি নিহত হয়েছেন। এই যুদ্ধে মুসলমানদের ৭৩ জন মুজাহিদ শহীদ হন। অপরপক্ষে শত্রু পক্ষের নিহত হয় ২৩ জন।
৩. খন্দকের যুদ্ধ :
৬২৭ খৃষ্টাব্দের ৩১ শে মার্চ যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। কুরাইশ, ইহুদী ও বেদুইনদের মোট সৈন্য সংখ্যা ছিল ১০৬০০ জন। মুসলমানদের সৈন্য ছিল ৩০০০ জন। মুহাম্মদ (ﷺ) পারস্যবাসী সালমান ফারসীর পরামর্শে ৬ দিন কঠোর পরিশ্রম করে মদীনার চর্তুদিকে পরিখা খনন করেন। কুরাইশরা দীর্ঘ ২৭ দিন মদীনা অবরোধ করে রাখে। পরিখার কারনে মদীনা আক্রমনে ব্যর্থ হয়ে আবু সুফিয়ার মক্কায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
৪. হুদায়বিয়ার সন্ধি :
রাসুল ﷺ ৬২৮ খৃষ্টাব্দে মক্কায় গমনের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এবং ১৪০০ সাহাবী নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বুদাইল বিন ওরাকার নিকট কুরাইশদের যুদ্ধাভিযানের কথা শুনে মক্কার নয় মাইল অদূরে হুদায়বিয়া নামক স্থানে শিবির স্থাপন করেন। কুরাইশদের পক্ষ থেকে ওরাকা বিন মাসুদ সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে আসেন। মুসলমানদের পক্ষে হযরত ওসমান (রাঃ) সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে পাঠান। মুসলিম শিবিরে হযরত ওসমান হত্যার রব উঠে। এতে মুসলমানগণ ক্ষুব্ধ হইয়া শপথ করে যে, ওসমান হত্যার প্রতিশোধ না নিয়ে তারা ফিরে যাবেনা। মুসলমানদের এই ঘোষণা শুনে কুরাইশরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠে এবং সাথে সাথে সুহাইল বিন আমরকে সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে পাঠায়। ইতিহাসে এটা হুদায়রিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত।
সন্ধির প্রধান প্রধান শর্তগুলো হলো -
১. ৬২৮ খৃষ্টাব্দে মুসলমানদের হজ্জ না করেই মদীনা ফিরে যাবে।
২. দশ বছর সকল প্রকার যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ থাকবে ।
৩. পরের বছর মাত্র তিন দিনের জন্য মুসলমানরা হজ্জ পালন করতে আসতে পারবে।
৪. মক্কায় অবস্থান কালে মুসলমানগণ শুধু মাত্র আত্মরক্ষার কোষবদ্ধ তরবারী রাখতে পারবে।
৫. কোন মক্কবাসী মদীনায় আশ্রয় চাইলে তাকে আশ্রয় দেয়া যাবেনা।
৬. কোন মদীনা বাসী মক্কায় আসলে তাকে মক্কাবাসী ফিরৎ দিতে বাধ্য থাকবে না।
৭. সন্ধির শর্তবলী উভয় পক্ষ সমান ভাবে পালন করবে ।
৫. মদীনা সনদ :
যখন মদীনাবাসীদের মধ্যে ধর্মীয় অধঃপতন ও হতাশা, সামাজিক অসন্তোষ ও কুসংস্কার এবং রাজনৈতিক বিশৃংখলা ও অরাজকতার হাত হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্য মদীনাবাসীগণ একজন মহাপুরুষ ও ত্রানকর্তারূপে রাসূল (ﷺ) কে সম্মানের সাথে আমন্ত্রণ করে । কারণ আউস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যে ৪০ বছর ধারাবাহিক যদ্ধের কারণে মদীনাবাসীগণ সংশয়, উদ্বেগ,অস্থির হয়ে পড়ে। মদীনার এই অস্থিরতা দূর, গোত্রগুলোর ঐক্য ও সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা করার মানসে রাসূল (ﷺ) একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র স্থাপনের সংকলপ করেন । আউস ও খাজরাজ গোত্রদ্বয়কে একাত্রিত করন ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করা এবং অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিঞ্চুতার ভিত্তিতে সহনশীলতার মনোভাব গড়ে তোলার জন্য তিনি ৪৭টি শর্ত সম্বলিত একটি সনদ প্রনয়ণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে ইহা “মদিনা সনদ” নামে পরিচিত ।
নিম্মে উল্ল্যেখযোগ্য শর্তাবলী আলোচনা করা হলো ।
ক. মদীনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদী, খৃষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায়সমূহ সমান অধিকার ভোগ করবে। এবং তারা একটি সাধারণ জাতি গঠন করবে।
খ. রাসূল (ﷺ) নবগঠিত প্রজাতন্ত্রের সভাপতি হবেন এবং পদাধিকার বলে তিনি মদীনার সর্বোচ্চ বিচারলয়ের সর্বময় কর্তা হবেন।
গ. পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
ঘ. কেউ কোরাইশদের সাথে কোন প্রকার সন্ধি করতে পারবে না। কিংবা মদীনা বাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে কোরাইশদেরকে সাহায্য করতে পারবে না।
ঙ. সম্প্রদায়কে বহি:শত্রু আক্রমন করলে সকল সম্প্রদায়ের লোকেরা সমবেত প্রচেষ্টায় তা প্রতিহত করবে।
চ. বহিঃশত্রুর আক্রমনে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়সমূহ স্ব স্ব যুদ্ধ ব্যয়ভার বহন করবে।
ছ. কোন ব্যক্তি অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত বলে গণ্য হবে। অপরাধের সম্প্রদায়কে দোষী করা যাবে না।
জ. মদীনা শহরকে পবিত্র ঘোষনা করা হলো। এতে কোন হত্যা, রক্তপাত এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলবে না।
ঝ. অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তি ভোগ করতে হবে। সর্বপ্রকার অপরাধীকে ঘৃনার চোখে দেখবে।
ঞ. ইহুদী মিত্ররাও সমান নিরাপত্তা পাবে ও স্বাধীনতা ভোগ করবে।
ট. দূর্বল ও অসহায়কে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করতে হবে।
ঠ. রাসূল (ﷺ) এর অনুমতি ছাড়া মদীনা বাসীগণ কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে পারবে না।
ড. সম্প্রদায়দের মধ্যে কোন বিরোধ দেখা দিলে রাসূল (ﷺ) আল্লাহর বিধান অনুসারে মীমাংসা করবেন।
ঢ. সনদের শর্ত ভঙ্গকারীর উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হইবে।
৬. খাইবারের যুদ্ধ :
৬২৮ খৃষ্টাব্দে মে মাসে ৭ম হিজরীর মহররম মাসে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয় । ইহুদীরা বেদুঈন গোত্রের সহযোগীতায় ৪০০০ চার হাজার সৈন্য নিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় । রাসূল (ﷺ) ২০০ অশ্বরোহীসহ ১,৬০০ মুসলিম যোদ্ধা প্রেরণ করেন। খাইবার ও বনু ঘাতফানদের মধ্যে যাতায়াত বন্ধের মাধ্যমে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় । দীর্ঘ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর ইহুদীরা আত্মসর্মপন করতে বাধ্য হয় ।
উল্লেখ্য এই যুদ্ধে আলী রা. আসাদুল্লাহ উপাদি লাভ করেন ।
৭. মুতার যুদ্ধ :
মুতার যুদ্ধ ৬২৯ খৃষ্টাব্দে (৮হিজরীর জমাদিউল উলা মাসে) সংগঠিত হয় । রাসূল (ﷺ) এর দূত হারিস বিন উমাইয়াকে মুতায় নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় । এই হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য রাসূল ﷺ ৩,০০০ (তিন হাজার) সৈন্যের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন । এ যুদ্ধে বিশিষ্ট তিন জন সেনাপতি সাহাবী (যায়েদ, জাফর, আব্দুল্লাহ ) শাহাদাৎ বরন করেন । এক লক্ষাধিক রোমান সৈন্যের মোকাবেলায় মাত্র ৩,০০০ (তিন হাজার) সৈন্য বিপর্যয়ের মুখে পড়লে বীরশ্রেষ্ঠ খালিদ বিন ওয়ালিদ সমূহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেন । বীরত্বের জন্য খালিদ বিন ওয়ালিদকে সাইফুল্লাহ উপাধি লাভ করেন।
৮. হুনাইনের যুদ্ধ :
৬৩০ খৃষ্টাব্দে ২৭শে জানুয়ারী ৮ম হিজরীতে হুনাইনের যুদ্ধ সংগঠিত হয় । মক্কার তিন মাইল দূরে হুনাইন নামক স্থানে ২০,০০০ সৈন্য নিয়ে বেদুইনরা সমাবেশ করে । বীর শ্রেষ্ঠ খালিদ বিন ওয়ালিদ এর নেতৃত্বে ১২,০০০ সৈন্য হুনাইন প্রান্তরে যুদ্ধে উপনিত হয় । এই যুদ্ধে ৬০০০ সৈন্য মুসলমানদের হাতে বন্দি হয় ।
৯. তাবুক অভিযান :
এটি ছিল রাসূল (ﷺ) এর জীবনের সর্বশেষ অভিযান। ৬৩০ খৃষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে (৯ হিজরীর রজব মাস) লক্ষাধিক সৈন্যসহ বায়জানটাইন বাহিনী মদীনার দিকে রওনা হয়। মুসলিম বাহিনীতে ১০০০ অশ্বারোহী ও ৩০০০ পদাতিক সৈন্যসহ মোট ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) সৈন্য ছিল। এই যুদ্ধে আবু বকর (রা.) তার সমস্ত সম্পদ দান করেন, হযরত ওমর তাঁর জীবনের অর্জিত সম্পদের অর্ধেক দান করেন, হযরত ওসমান (রা.) ও আব্দুর রহমান ইবনে আউফসহ সকলে বিপুল পরিমাণ সাহায্য করে। মহিলারা তাদের গহনা খুলে দিয়ে নযরানা পেশ করেন। এই সময়টিতে- দেশে চলছিল দুর্ভীক্ষ, আবহাওয়া ছিল প্রচন্ড গরম, ফসল কাটার সময় কাছে এসে গিয়েছিল, সওয়ারী ও সাজসরন্জামের ব্যবস্থা করা ছিল খুবই কঠিন। তথাপিও মুসলমানদের জন্য ছিল এটি অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন! বিধায় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর জন্য কোনভাবে পিছপা হওয়ার সুযোগ সামনে ছিল না। অবশেষে রোমান বাহিনী মুতার যুদ্ধের ভয়াবহ পরিনতির কথা স্বরন করে নিজেতের সৈন্যবাহিনী গুটিয়ে নেয়। ফলে এ অভিযানে যুদ্ধের কোন প্রয়োজন হয়নি।
Adv Mohsin Kabir Murad, Rajib Dewan and 62 others
15 Shares
Like
Comment
Share

momin ullah patwory

this is my fist time you tube post , four years ago . please visit my Chanel & subscribe